Skip to content Skip to footer

ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : মতভিন্নতার সাথে সম্প্রীতি বৈচিত্রে ঐক্য

ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব ও তাৎপর্য : মতভিন্নতার সাথে সম্প্রীতি বৈচিত্রে ঐক্য

মাওলানা আবদুল করিম

ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনা করা ইসলামের নির্দেশনা। ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আল্লাহ তায়ালা ও শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর প্রতি ঈমানের অনিবার্য দাবি হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ জীবন যাপন করা। তাওহীদের পরে মুমিনদের যে ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি তাকিদ দেয়া হয়েছে তা হলো ঐক্যবদ্ধ থাকা। ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য।

এ সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন:
وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا.
“হে মুমিননগণ। তোমরা আল্লাহর রজ্জু (ইসলাম ও কুরআন) কে ঐক্যবদ্ধভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।“ (সূরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩)

وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ.
“তোমরা সেসব লোকদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দলে- উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। (সূরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫)।

ইসলামে মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এ সম্পর্কের ভিত্তি ইসলামের একটি স্তম্ব যা তাওহীদের সাথে সংযুক্ত। যে কেউ তাওহীদের স্বীকৃতি দিবে সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে।
এই ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বজায় রাখার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলা বলেন:
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ.
“নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা-৪৯ হুজরাত, আয়াত: ১০)

বিশ্বাসী মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَیَجۡعَلُ لَهُمُ الرَّحۡمٰنُ وُدًّا.
“যারা বিশ্বাস করে এবং সৎকর্ম করে পরম দয়াময় তাদের জন্য (পারস্পরিক ঐক্য-সম্প্রীতি সৃষ্টি করবেন।” (সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৯৬)

অনৈক্যের বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেন:
مُنِیۡبِیۡنَ اِلَیۡهِ وَ اتَّقُوۡهُ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَمِنَ الَّذِیۡنَ فَرَّقُوۡا دِیۡنَهُمۡ وَ کَانُوۡا شِیَعًا ؕ کُلُّ حِزۡبٍۭ بِمَا لَدَیۡهِمۡ فَرِحُوۡنَ.
“হে ঈমানদারগণ!তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, সলাত কায়েম কর এবং মুশরিকদের দলভূক্ত হইও না। যারা তাদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে, এদের প্রত্যেক দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই ব্যস্ত।”(সূরা-৩২, আর-রুম, আয়াত: ৩১-৩২)

আল্লাহ মুসলমানদের কাছ থেকে ঠিক এমনটিই চান, আমরা বড় কিছু করার জন্য যেন একত্রিত হই।
কুরআন কারীমে ইরশাদ হয়েছে-
اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِهٖ صَفًّا کَاَنَّهُمۡ بُنۡیَانٌ مَّرۡصُوۡصٌ.
“আল্লাহ এইসব লোকদের পছন্দ করেন যারা তাঁর রাস্তায় একত্রে লড়াই করে, যেন তারা সীসাঢালা প্রাচীর।” (সুরা-৬১ সফ, আয়াত: ৪)

মুসলিম উম্মাহ পরস্পর ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং মুসলিমদের একতা ও সংহতি রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক কাজ। উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষা এবং বিভেদ ও অনৈক্য থেকে বেঁচে থাকাও ইসলামের মৌলিক কাজ।

ইসলাম তাওহীদের দ্বীন এবং ঐক্যের ধর্ম। ইসলামে অনৈক্য ও বিভেদের অবকাশ নেই। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে তাওহীদ- এক আল্লাহর ইবাদাত, এক আল্লাহর ভয়। ইসলাম আদেশ করে একতাবদ্ধ থাকার, নিজেদের ঐক্য ও সংহতি এবং সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করার এবং এমন সব কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকার, যা উম্মাহর একতা নষ্ট করে এবং সম্প্রীতি বিনষ্ট করে। ইসলামের দৃষ্টিতে কুফর এবং পরস্পর কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম ও কবিরা গুনাহ।
আল্লাহ তাআলা বলেন: اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً ۫, وَّ اَنَا رَبُّکُمۡ فَاعۡبُدُوۡنِ.
“নিশ্চিত জেনে রাখো! এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদাত কর। (সূরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৯২)

وَ تَقَطَّعُوۡۤا اَمۡرَهُمۡ بَیۡنَهُمۡ ؕ کُلٌّ اِلَیۡنَا رٰجِعُوۡنَ.
“কিন্তু তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মাঝে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলেছে।” (সূরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৯৩)

وَ اِنَّ هٰذِهٖۤ اُمَّتُکُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّ اَنَا رَبُّکُمۡ فَاتَّقُوۡنِ.
“নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ (তাওহীদের উম্মাহ) এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমাকে ভয় কর।(সূরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫২)

فَتَقَطَّعُوۡۤا اَمۡرَهُمۡ بَیۡنَهُمۡ زُبُرًا ؕ کُلُّ حِزۡبٍۭ بِمَا لَدَیۡهِمۡ فَرِحُوۡنَ.
“এরপর তারা নিজেদের দ্বীনের মাঝে বিভেদ করে। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেলো। প্রত্যেক দল যে পথ গ্রহণ করলো তাতেই মত্ত রইলো।” (সূরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত:৫৩)

وَ مَا کَانَ النَّاسُ اِلَّاۤ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً.
“আল্লাহর কাছে উম্মত একটিই। আর তা হচ্ছে তাওহীদের উম্মত।”(সূরা-১০ ইউনুস, আয়াত:১৯

“আদিতে সকল মানুষ এক সমাজেই ছিলো। পরে লোকেরা আলাদা উম্মত, আলাদা সমাজ বানিয়ে নিয়েছে।” (সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ২১৩)

উন্মাহর ঐক্য ও সংহতির কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে তাওহীদ। কুরআন মাজীদের ঘোষণা:
شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِهٖ نُوۡحًا وَّ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَ مَا وَصَّیۡنَا بِهٖۤ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰۤی اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡهِ ؕ کَبُرَ عَلَی الۡمُشۡرِکِیۡنَ مَا تَدۡعُوۡهُمۡ اِلَیۡهِ ؕ اَللّٰهُ یَجۡتَبِیۡۤ اِلَیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَهۡدِیۡۤ اِلَیۡهِ مَنۡ یُّنِیۡبُ.
وَ مَا تَفَرَّقُوۡۤا اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡیًۢا بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ لَوۡ لَا کَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّکَ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی لَّقُضِیَ بَیۡنَهُمۡ ؕ وَ اِنَّ الَّذِیۡنَ اُوۡرِثُوا الۡکِتٰبَ مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ لَفِیۡ شَکٍّ مِّنۡهُ مُرِیۡبٍ.

فَلِذٰلِکَ فَادۡعُ ۚ وَ اسۡتَقِمۡ کَمَاۤ اُمِرۡتَ ۚ وَ لَا تَتَّبِعۡ اَهۡوَآءَهُمۡ ۚ وَ قُلۡ اٰمَنۡتُ بِمَاۤ اَنۡزَلَ اللّٰهُ مِنۡ کِتٰبٍ ۚ وَ اُمِرۡتُ لِاَعۡدِلَ بَیۡنَکُمۡ ؕ اَللّٰهُ رَبُّنَا وَ رَبُّکُمۡ ؕ لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَ لَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ ؕ لَا حُجَّۃَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَکُمۡ ؕ اَللّٰهُ یَجۡمَعُ بَیۡنَنَا ۚ وَ اِلَیۡهِ الۡمَصِیۡرُ.

“তিনি তোমাদের জন্য সেই দ্বীনই স্থির করেছেন, যার হুকুম দিয়েছিলেন নূহকে এবং যা আমি ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পাঠিয়েছি এবং যার হুকুম দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মুসা ও ঈসাকে যে, কায়েম কর এই দ্বীন এবং তাতে বিভেদ সৃষ্টি করো না। মুশরিকদের তুমি যেদিকে ডাকছো তা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুভার মনে হয়। আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিজের দিকে আকৃষ্ট করেন এবং যে আল্লাহর দিকে রুজু হয় তাকে নিজ দরবার পর্যন্ত পৗঁছার সামর্থ্য দান করেন। এবং মানুষ যে বিচ্ছিন্ন হয়েছে তা হয়েছে তাদের কাছে নিশ্চিত জ্ঞান আসার পরই পারস্পরিক শত্রুতার কারণে। তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে যদি একটি কথা নির্ধারিত কাল পর্যন্ত পূর্বেই স্থির না থাকতো তবে তাদের বিষয়ে ফয়সালা হয়ে যেত। তাদের পর যারা কিতাবের উত্তরাধিকারী হয়েছে, তারা এ সম্পর্কে এক বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে। সুতরাং তুমি ঐ বিষয়ের দিকেই মানুষকে আহ্বান কর এবং অবিচল থাকো, যেরূপ তোমাকে আদেশ করা হয়েছে। এবং তাদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না।

বল, আল্লাহ যে কিতাব নাযিল করেছেন আমি তার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি তোমাদের মাঝে ন্যায় বিচার করতে। আল্লাহ আমাদের রব এবং তোমাদেরও রব। আমাদের কর্মফল আমাদের, তোমাদের কর্মফল তোমাদের। আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো (ব্যক্তিগত) বিরোধ নেই। আল্লাহ আমাদের সকলকে একত্র করবেন এবং তাঁরই কাছে সকলের প্রত্যাবর্তন।” (সূরা-৪২ শূরা, আয়াত: ১৩-১৫)

এ বিভেদ বিচ্ছিন্নতা কেবল জিদ ও হঠকারিতার কারণেই হয়ে থাকে। বিধানের ক্ষেত্রে নবীগণের শরীয়তেও ভিন্নতা ছিলো, অনন্ত তাঁদের সবার দ্বীন ছিলো এক। তাঁরা সবাই ছিলেন তাওহীদপন্থী এবং অভিন্ন। এখানেই ইসলামের অতুলনীয় সৌন্দর্য্য, কারো সাথে জুলুম-অবিচার করা যাবে না; সবার সাথে ন্যায়বিচার করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালার বাণী:
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ حَقَّ تُقٰتِهٖ وَ لَا تَمُوۡتُنَّ اِلَّا وَ اَنۡتُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ﴿۱۰۲﴾
وَ اعۡتَصِمُوۡا بِحَبۡلِ اللّٰهِ جَمِیۡعًا وَّ لَا تَفَرَّقُوۡا ۪ وَ اذۡکُرُوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ عَلَیۡکُمۡ اِذۡ کُنۡتُمۡ اَعۡدَآءً فَاَلَّفَ بَیۡنَ قُلُوۡبِکُمۡ فَاَصۡبَحۡتُمۡ بِنِعۡمَتِهٖۤ اِخۡوَانًا ۚ وَ کُنۡتُمۡ عَلٰی شَفَا حُفۡرَۃٍ مِّنَ النَّارِ فَاَنۡقَذَکُمۡ مِّنۡهَا ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰهُ لَکُمۡ اٰیٰتِهٖ لَعَلَّکُمۡ تَهۡتَدُوۡنَ ﴿۱۰۳﴾
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡهَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ هُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ ﴿۱۰۴﴾
وَ لَا تَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ تَفَرَّقُوۡا وَ اخۡتَلَفُوۡا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡبَیِّنٰتُ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ لَهُمۡ عَذَابٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۰۵﴾
یَّوۡمَ تَبۡیَضُّ وُجُوۡهٌ وَّ تَسۡوَدُّ وُجُوۡهٌ ۚ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ اسۡوَدَّتۡ وُجُوۡهُهُمۡ ۟ اَکَفَرۡتُمۡ بَعۡدَ اِیۡمَانِکُمۡ فَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَکۡفُرُوۡنَ ﴿۱۰۶﴾
وَ اَمَّا الَّذِیۡنَ ابۡیَضَّتۡ وُجُوۡهُهُمۡ فَفِیۡ رَحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ هُمۡ فِیۡهَا خٰلِدُوۡنَ ﴿۱۰۷﴾

“হে মুমিনগণ। তোমরা আল্লাহকে সেভাবে ভয় করো যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিৎ। এবং তোমাদের মৃত্যু যেন এ অবস্থায় আসে যে, তোমরা মুসলিম। তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে দঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিভেদ করো না। স্মরণ করো যখন তোমরা একে অন্যের শত্রু ছিলে তখন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। তিনি তোমাদের অন্তরসমূহ একে অপরের সাথে মিলিয়ে দিয়েছেন। ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গিয়েছ। তোমরা তো ছিলে অগ্নিকুন্ডের দ্বার প্রান্তে আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের মুক্ত করেছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যেন তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হও। তোমাদের মধ্যে যেন এমন একটি দল থাকে, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে, সৎকাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজে বাধা দিবে। আর এরাই তো সফলকাম। তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা বিচ্ছিন্ন হয়েছিলো এবং মতভেদ করেছিলো তাদের নিকট সুস্পষ্ট বিধানসমূহ পৌঁছার পর। এদের জন্যই রয়েছে ভীষণ শাস্তি। যেদিন কতক মুখ উজ্জ্বল হবে আর কতক মুখ কালো হবে। যাদের মুখ কালো হবে। তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কুফরি করলে ঈমান আনার পর। সুতরাং স্বীয় কুফরির দরুণ শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করো। পক্ষান্তরে যাদের মুখ উজ্জ্বল হবে তারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকবে। সেখানে তারা অনন্তকাল থাকবে।”(সূরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০২-১০৭)

আল্লাহর সাথে বান্দার কৃত অঙ্গীকারের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হলো, বান্দা শুধু রবেরই ইবাদাত করবে, অন্য কারো নয়।

আল্লাহ তয়াালার বাণী:
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ الۡکِتٰبَ وَ الۡحُکۡمَ وَ النُّبُوَّۃَ وَ رَزَقۡنٰهُمۡ مِّنَ الطَّیِّبٰتِ وَ فَضَّلۡنٰهُمۡ عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿ۚ۱۶﴾
وَ اٰتَیۡنٰهُمۡ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ ۚ فَمَا اخۡتَلَفُوۡۤا اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَهُمُ الۡعِلۡمُ ۙ بَغۡیًۢا بَیۡنَهُمۡ ؕ اِنَّ رَبَّکَ یَقۡضِیۡ بَیۡنَهُمۡ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ فِیۡمَا کَانُوۡا فِیۡهِ یَخۡتَلِفُوۡنَ ﴿۱۷﴾
ثُمَّ جَعَلۡنٰکَ عَلٰی شَرِیۡعَۃٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ فَاتَّبِعۡهَا وَ لَا تَتَّبِعۡ اَهۡوَآءَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۸﴾
اِنَّهُمۡ لَنۡ یُّغۡنُوۡا عَنۡکَ مِنَ اللّٰهِ شَیۡئًا ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ بَعۡضُهُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ ۚ وَ اللّٰهُ وَلِیُّ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۱۹﴾ هٰذَا بَصَآئِرُ لِلنَّاسِ وَ هُدًی وَّ رَحۡمَۃٌ لِّقَوۡمٍ یُّوۡقِنُوۡنَ ﴿۲۰﴾

“আমি তো বনী ইসরাইলকে কিতাব, রাজত্ব ও নবুওয়াত দান করেছিলাম। তাদেরকে উত্তম রিযিক প্রদান করেছিলাম এবং জগদ্বাসীর উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম। আমি তাদেরকে দ্বীনের সুস্পষ্ট বিধানাবলী দান করেছিলাম। অত:পর তারা যে মতভেদ করলো তা তাদের কাছে ইলম আসার পরই করেছিলো শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করতো তোমার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে তাদের মাঝে ফয়সালা করে দিবেন। এরপর আমি তোমাকে দ্বীনের এক বিশেষ শরীয়তের উপর রেখেছি। সুতরাং তা অনুসরণ করো, অন্যদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করো না। আল্লাহর মুকাবিলায় তারা তোমার কিছুমাত্রও কাজে আসবে না। বস্তুত জালিমরা একে অপরের বন্ধু। আর আল্লাহ মুত্তাকীদের বন্ধু। এটি (কুরআন) সকল মানুষের জন্য প্রকৃত জ্ঞানের সমষ্টি এবং দৃঢ় বিশ্বাসীদের জন্য গন্তব্যে পৌঁছার মাধ্যম ও রহমত।” (সূরা-৪৫ জাছিয়া, আয়াত: ১৬- ২০)

ঐক্যের ভিত্তি হলো তাওহীদ। ঐক্যের অর্থ ঈমান ও ইসলামের সূত্রে একতাবদ্ধ থাকা।
আল-কুরানের বাণী:
وَ اَطِیۡعُوا اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ وَ لَا تَنَازَعُوۡا فَتَفۡشَلُوۡا وَ تَذۡهَبَ رِیۡحُکُمۡ وَ اصۡبِرُوۡا ؕ اِنَّ اللّٰهَ مَعَ الصّٰبِرِیۡنَ ﴿ۚ۴۶﴾
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। পরস্পর বিবাদ করো না, তাহলে দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব বিলুপ্ত হবে। আর ধৈর্য ধারণ করো। নিশ্চিত জেনো, আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আনফাল, আয়াত-৪৬ )

একে অন্যকে উপহাস করা যাবে না, নিন্দা বা মন্দ জ্ঞান করা যাবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ اِخۡوَۃٌ فَاَصۡلِحُوۡا بَیۡنَ اَخَوَیۡکُمۡ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ لَعَلَّکُمۡ تُرۡحَمُوۡنَ ﴿۱۰﴾
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا یَسۡخَرۡ قَوۡمٌ مِّنۡ قَوۡمٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا خَیۡرًا مِّنۡهُمۡ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنۡ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُنَّ خَیۡرًا مِّنۡهُنَّ ۚ وَ لَا تَلۡمِزُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ لَا تَنَابَزُوۡا بِالۡاَلۡقَابِ ؕ بِئۡسَ الِاسۡمُ الۡفُسُوۡقُ بَعۡدَ الۡاِیۡمَانِ ۚ وَ مَنۡ لَّمۡ یَتُبۡ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۱۱﴾
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ ۫ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا وَ لَا یَغۡتَبۡ بَّعۡضُکُمۡ بَعۡضًا ؕ اَیُحِبُّ اَحَدُکُمۡ اَنۡ یَّاۡکُلَ لَحۡمَ اَخِیۡهِ مَیۡتًا فَکَرِهۡتُمُوۡهُ ؕ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ تَوَّابٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۲﴾
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اِنَّا خَلَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ ذَکَرٍ وَّ اُنۡثٰی وَ جَعَلۡنٰکُمۡ شُعُوۡبًا وَّ قَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوۡا ؕ اِنَّ اَکۡرَمَکُمۡ عِنۡدَ اللّٰهِ اَتۡقٰکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ﴿۱۳﴾

“মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা রহমত প্রাপ্ত হও। হে মুমিনগণ! কোনো পুরুষ যেন অপর পুরুষকে উপহাস না করে। সে তার চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী ও যেন অপর নারীকে উপহাস না করে। সে তার চেয়ে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না এবং একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমানের পর ফিসকের নাম যুক্ত হওয়া কত না মন্দ! যারা এসব থেকে বিরত হবে না তারাই জালিম। হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাকো কেননা কোনো কোনো অনুমান পাপ। তোমরা কারো গোপন ত্রুটি অনসন্ধান করবে না এবং একে অন্যের গীবত করবে না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোস্ত খেতে পছন্দ করবে? এটাতো তোমরা ঘৃণা করে থাকো। আল্লাহকে ভয় কর নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী,পরম দয়ালু। আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী থেকে এবং তোমাদের মাঝে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও গোত্র বানিয়েছি। যাতে একে অন্যকে চিনতে পারো। নিশ্চিত জেনো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সর্বাপেক্ষা বেশি মর্যাদাবান, যে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশি মুত্তাকী। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সমস্ত খবর রাখেন।”
ইসলামী ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু তাওহীদ, উম্মাহর জাতীয়তা ইসলাম, আর মর্যাদার মাপকাঠি তাকওয়া ও ইখলাস। (সূরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১০-১৩)

রসূলুল্লাহ (স.) বলেন:
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَأْثُرُ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ وَلاَ تَجَسَّسُوا وَلاَ تَحَسَّسُوا وَلاَ تَبَاغَضُوا وَكُونُوا عبادَ الله إِخْوَانًا.
“তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ ধারণা হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। তোমরা আঁড় পেতো না, গোপন দোষ অন্বেষণ করো না, স্বার্থের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, হিংসা করো না, বিদ্বেষ পোষণ করো না, সম্পর্কচ্ছেদ করো না, পরস্পর কথাবার্তা বন্ধ করো না, একে অপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ো না, দাম-দরে প্রতারণা করো না এবং নিজের ভাইয়ের বিক্রয়ের মাঝে ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করো না। হে আল্লাহর বান্দারা। আল্লাহ যেমন আদেশ করেছেন, তেমনি সবাই তোমরা আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও । (বুখারী ৫১৪০, ৬০৪৪, ৬০৬৫। মুসলিম: ২৫৬৩/২৮, ২৯, ৩০ ও ২৫৬৪/৩২, ৩৩)

عَنْ أَبِي بَرْزَةَ الْأَسْلَمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا مَعْشَرَ مَنْ آمَنَ بِلِسَانِهِ، وَلَمْ يَدْخُلِ الْإِيمَانُ قَلْبَهُ، لَا تَغْتَابُوا الْمُسْلِمِينَ، وَلَا تَتَّبِعُوا عَوْرَاتِهِمْ، فَإِنَّهُ مَنِ اتَّبَعَ عَوْرَاتِهِمْ يَتَّبِعُ اللَّهُ عَوْرَتَهُ، وَمَنْ يَتَّبِعِ اللَّهُ عَوْرَتَهُ يَفْضَحْهُ فِي بَيْتِهِ.
“ওহে যারা মুখে মুখে ঈমান এনেছো, কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি তারা শোনো, মুসলমানের গীবত করো না এবং তাদের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করো না। কারণ যে তাদেও দোষ খুঁজবে স্বয়ং আল্লাহ তার দোষ খুঁজবেন। আর আল্লাহ যার দোষ খুঁজবেন তাকে তার নিজের ঘরে লাঞ্ছিত করবেন।” (মুসনাদে আহমদ ১৯৭৭ সুনানে আবু দাউদ ৪৮৮০)

কুরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যায় সাহাবায়ে কিরাম থেকে মতপার্থক্য চলে আসছে, কিন্তু সে মতবিরোধ দ্বন্ধে রূপান্তরিত হয়নি। একে আরবীতে বলা হয় ‘আল ইত্তিহাদ মা‘য়াল ইখতিলাফ’ বা ‘আল ইতিফাক মা’আল ইখতেলাফ’ মতভিন্নতাসহ ঐক্য। এধরনের মতভিন্নতা বা ব্যাখ্যার বৈচিত্র উম্মাহকে গবেষণা ও আবিষ্কারে এবং সময়ের চাহিদা পূরণে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে। এজন্যই বলা হয়ে থাকে ইখতিলাফুল উলামায়ে রহমাতুন অর্থাৎ আলেমদের ইখতিলাফ উম্মাতের জন্য রহমত। (নাফহাতুল আরব)
কারো প্রতি হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করা যাবে না।

হযরত আনাস (রা.) বর্ণনা করেন- রসূলুল্লাহ (স.) আমাকে বলেছেন, হে আমার প্রিয় সন্তান। যদি তোমার পক্ষে সম্ভবপর হয় যে, তুমি এভাবে দিন রাত অতিবাহিত করবে যে, তোমার অন্তরে কারো জন্য কোনো হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না তবে তাই করো। তিনি আমাকে আরো বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তান। এটাই আমার সুন্নাত, যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসলো সে আমাকেই ভালোবাসলো যে আমাকে ভালোবাসলো সে জান্নাতে আমার সাথেই থাকবে। (সহীহ মুসলিম: ২৭২৬)